লোহিত সাগরে ফের হারিয়ে গেল মার্কিন নৌবাহিনীর একটি এফ/এ-১৮ সুপার হর্নেট যুদ্ধবিমান। এবার বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস হ্যারি এস. ট্রুম্যান থেকে রানওয়েতে অবতরণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে সাগরে পড়ে যায় ছয় কোটি ডলার দামের যুদ্ধবিমানটি। এক সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে এটা ট্রুম্যানের দ্বিতীয় সুপার হর্নেট হারানোর ঘটনা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, মঙ্গলবার (৬ মে) রাতে এ ঘটনা ঘটে।
যুদ্ধবিমানটি ঠিক কী কারণে সাগরে পড়ল তা এখনো নিশ্চিত নয়। তদন্ত চলছে। তবে সংশ্লিষ্ট দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অবতরণ করার সময় রানওয়েতে ঠিকমতো থামতে পারেনি বিমানটি। ফলে পানিতে পড়ে যায়। সৌভাগ্যবশত, পাইলট ও অস্ত্র কর্মকর্তা উভয়ই বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন এবং হেলিকপ্টার এসে তাদের উদ্ধার করে। তারা জীবিত আছেন, তবে সামান্য আহত হয়েছেন।
এই ঘটনার ঠিক আগেই যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। হোয়াইট হাউসে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “হুতিরা আমাদের জাহাজে হামলা করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাই আমরাও আর বোমা ফেলব না।” ধারণা করা হচ্ছে, যুদ্ধবিমান হারানোর ঘটনা ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে।
এর আগেও, ২৮ এপ্রিল ট্রুম্যান থেকেই সাগরে পড়ে যায় আরেকটি সুপার হর্নেট। তখনও যুদ্ধজাহাজটি ইয়েমেনের হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র এড়াতে তীব্র বাঁক নিয়েছিল, আর সেখানেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যায় বিমান। ডিসেম্বরে এমন একটি যুদ্ধবিমান ‘ভুল করে’ ভূপাতিত করেছিল ইউএসএস গেটিসবার্গ। সব মিলিয়ে, লোহিত সাগরে এখন পর্যন্ত তিনটি সুপার হর্নেট হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
শুধু যুদ্ধবিমানই নয়—হুতি বিদ্রোহীদের হাতে একের পর এক ভূপাতিত হচ্ছে মার্কিন ড্রোন। এখন পর্যন্ত ২২টি এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন হারিয়েছে তারা, যার প্রতিটির দাম ৩ কোটি ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৩৬৪ কোটি)। হুতিরা দাবি করছে, সবগুলোই তাদের পাল্টা হামলায় গুঁড়িয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের পর ইয়েমেনের হুতিরা ইসরায়েলি ও মার্কিন জাহাজকে লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে। এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্র লোহিত সাগরে পাঠায় দুইটি বিমানবাহী রণতরী—ইউএসএস হ্যারি এস. ট্রুম্যান এবং ইউএসএস কার্ল ভিনসন। এরপর থেকেই রণতরীগুলোর ওপর একের পর এক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে হুতিরা।
সর্বশেষ ঘটনায় যুদ্ধবিমান উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে এখনো সাগরের তলদেশ থেকে বিমানটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।